যমুনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আলোর ঝিলিক
যমুনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আলোর ঝিলিক দেখা দিয়েছে। আলোর ঝিলিক এনে দিয়েছে সৌর বিদ্যুৎ, স্থানীয়দের ভাষায় যা সোলার নামে পরিচিত। সৌর বিদ্যুতের এ ঝলকানিতে চরাঞ্চলের জীবনযাত্রায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। চরাঞ্চলের অর্থনীতিতেও এসেছে জোয়ার। সন্ধ্যার পরই যারা ঘুমিয়ে পড়ত, তারা এখন কাজকর্ম সেরে টেলিভিশন দেখে। ছেলে-মেয়েরা উজ্জল আলোয় অনেক রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে। যমুনা নদীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রুপসা। দ্বীপটি সিরাজগঞ্জের মেছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত হলেও প্রমত্ত¡া যমুনার বুক চিরে রুপসা গ্রামের জন্ম। উত্তাল যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলের বেশকিছু গ্রামের মধ্যে রুপসা অন্যতম।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) পাঁচ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌর বিদ্যুৎ-মিনিগ্রীড চালু করে। প্রতিদিন এই প্রকল্পে ১৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর এই বিদ্যুতেই আলোকিত হয়েছে রুপসা চরের মানুষ।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) পাঁচ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌর বিদ্যুৎ-মিনিগ্রীড চালু করে। প্রতিদিন এই প্রকল্পে ১৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর এই বিদ্যুতেই আলোকিত হয়েছে রুপসা চরের মানুষ।
সোলারগাঁও লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এক একর জায়গার উপর স্থাপন করেছে সোলার মিনিগ্রীড (বিদ্যুৎ উৎপাদক কেন্দ্র)। এখান থেকে নয় কিলোমিটার সংযোগ লাইনও বসানো হয়েছে। এ লাইন থেকেই এক বছরে ৪৭৪জন গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৩১০জন আবাসিক এবং ১৬৪জন বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে। আট হাজার ১০৫ জন বসতির গ্রাম রুপসাকে বদলে দিয়েছে এই সোলার মিনিগ্রীড।
সোলার মিনিগ্রীড স্থাপনের মাধ্যমে ওই গ্রামের মানুষ ঘরে ঘরে বিদ্যুত পেয়ে আনন্দিত। তাদের প্রায় প্রত্যেকের ঘরেই রয়েছে টেলিভিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেক্টনিক্স সামগ্রী। এ গ্রামের মানুষ গত এক বছর আগেও বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না। এখন প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল ফোন।
বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র ভরসা ছিল জেনারেটর। জেনারেটর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে প্রতিদিন যে ডিজেল ফুরাত তাতে সবমিলিয়ে ব্যবসায় লাভের অংকটা খুবই সামান্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে রুপসা গ্রামের মানুষ জেনারেটরের পরিবর্তে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যবসায় লাভবান হচ্ছে।
যমুনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হলেও রুপসা গ্রামে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রয়েছে পাকা রাস্তাও। সেই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় সেই রাস্তা দিয়ে এখন ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চলে। এলাকার মানুষের জীবন-মানের অভাবনীয় পরিবর্তনে সকলের চোখে-মুখে উৎফুল্লের হাসি।
রুপসা গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার জানান, আগে সন্ধ্যার পরই চরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়ত। বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সকল কাজকর্ম শেষ করে টেলিভিশন দেখে সময় কাটিয়ে যখন ইচ্ছে তখন ঘুমাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েরাও বিদ্যুতের উজ্জল আলোয় লেখাপড়া করতে পারছে।
বিদ্যুতের কারণে পাল্টে গেছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রুপসা বাজারটির চিত্রও। মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যবসায়ী জানান, আগে জেনারেটরে কাজ করতে অনেক ঝামেলা হত। বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে ঝামেলা ছাড়াই দিন-রাত কাজ করছেন তিনি। আগের তুলনায় প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে অনেক কম।
সোনারগাঁও লিমিটেডের প্ল্যান্ট প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, প্রতি গ্রাহককে সংযোগ নিতে আড়াই হাজার টাকা জমা দিতে হয়। লাইন থেকে ৬৫ ফুট পর্যন্ত সংযোগ তার বিনামূল্যে দেয়া হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২০ টাকা। তবে এটি ১০টাকা বাড়িয়ে ৩০টাকা করা হবে।
তিনি জানান, সোলার মিনিগ্রীড প্রকল্পে ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকরচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (ইডকল)। ৩০ভাগ দশ বছর মেয়াদী ছয় পার্সেন্ট সুদে ঋণ দিয়েছে তারা (ইডকল)। বাকী ২০ ভাগ বিনিয়োগ করেছে সোলারগাঁও।
মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গত এক বছর আগেও বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বিদ্যুৎ আসায় এ এলাকার মানুষের অভাবনীয় উপকার হয়েছে।
ইনফ্রাস্ট্রাকরচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের (ইডকল) নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক জানান, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম ২৭টি প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সোলার মিনিগ্রীড প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। যার মধ্যে ১৭টি চালু হয়েছে। বাকীগুলো নির্মাণাধীন।