Corporate World এ ঢুকছেন? এই শিষ্টাচারগুলো জেনে রাখুন! পর্ব – ১

আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ভার্সিটির একটা কোর্সের রিপোর্ট তৈরির জন্য সার্ভে করতে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যাই। যাওয়ার আগে একটু ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলাম যে, কোম্পানিতে গিয়ে ঠিক কী ধরণের শিষ্টাচারগুলো অনুসরণ করতে হবে। সে যাত্রায় একদিনের জন্য কোম্পানি থেকে ঘুরে চলে আসলেও বুঝতে পারলাম, চাকরিজীবনে প্রতিদিনই এমন শিষ্টাচার কিংবা ‘এটিকেটস’ অনুসরণ করে চলতে হয়। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে এই শিষ্টাচারগুলো অনুসরণ করার গুরুত্ব অনেকখানি। কিন্তু অনেক সময় এই বিষয়ে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমাদের নানা ধরণের ভুল করে ফেলাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে ঢোকার পর যাতে শিষ্টাচারগুলো অনুসরণ করা নিয়ে কোনো ধরণের সমস্যায় না পড়তে হয় সেজন্য আমাদের এই শিষ্টাচারগুলো জানতে হবে। আর কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে ঢোকার আগেই শিষ্টাচারগুলো নিয়ে জানতে হলে পড়তে হবে এই লেখাটি।

১. কর্মক্ষেত্রে শিষ্টাচার:

এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি যে অফিসে চাকরি করছেন কিংবা করতে যাচ্ছেন সেটির এবং সেখানে আপনার আচরণের উপর। একটি কোম্পানির কালচার বা সংস্কৃতির থেকে অন্য কোম্পানির সংস্কৃতি আলাদা হতে পারে। যেমন – অ্যামেরিকার কোম্পানিগুলোতে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেখানে ইউরোপের কোম্পানিগুলোতে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলার সময় ১২ ইঞ্চি বা তার চাইতে কিছু কম দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলে। তেমনি আমাদের দেশেও বিভিন্ন কোম্পানির সংস্কৃতি বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
অনেক কোম্পানিতে আপনি চাইলেই আপনার পোষা কুকুর বা বিড়াল নিয়ে যেতে পারেন; কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোতে আপনার এই আচরণে আপনার সহকর্মী কিংবা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোম্পানির বর্ণ, ধর্ম বা জাতীয়তাবাদে আঘাত করে না এমন যে কোনো সংস্কৃতিই আপনি অনায়াসে অনুসরণ করতে পারেন। আর সেটাই হবে পেশাদারিত্বের লক্ষণ।তবে সাধারণভাবেই যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন কর্মক্ষেত্রে সেগুলো হচ্ছে-

নামের প্রতি খেয়াল রাখুন:

স্বাভাবিকভাবেই আমরা নতুন কারোর সাথে পরিচিত হলে তার নামটাই সবার আগে জানি। নাম দিয়েই যেহেতু আমরা মানুষকে মনে রাখি, সেহেতু কর্মক্ষেত্রে কারোর সাথে প্রথম দেখা হলে তার নামের দিকে মনোযোগ দিন। কারোর নাম উচ্চারণে সমস্যা মনে হলে তাকে তার নাম আবার জিজ্ঞেস করে নিন।
অনেক সময় আমরা অন্যের নাম ভুলে যাই, সেক্ষেত্রে বিনয়ী হয়ে তাদেরকে নাম পুনরায় জিজ্ঞেস করুন। আর মনে রাখবেন, বন্ধুমহলে একে অন্যের অনেক ধরণের নাম দিলেও কর্মক্ষেত্রে কোনোভাবেই কারোর নাম বিকৃত করা যাবে না। যার যে নাম সে নামেই তাকে ডাকতে হবে। কেননা আপনি যার নাম বিকৃত করার চেষ্টা করছেন, সে সেটা পছন্দ নাও করতে পারে। যেমন আপনাকে আপনার নামে না ডেকে বিকৃত নামে ডাকলে আপনি পছন্দ নাও করতে পারেন। তাই কারোর নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হোন।

চোখে চোখ রেখে হ্যান্ডশেক করুন:

হ্যান্ডশেক হচ্ছে সার্বজনীন ব্যবসায়িক অভিবাদনের একটি পন্থা। দৃঢ় হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ব্যক্তি দুইজনের সাক্ষাৎকার কিংবা প্রয়োজন খুব ভালোভাবে মিটেছে এবং হ্যান্ডশেক যদি হয় দুর্বল তবে বুঝতে হবে যে, দিনটি বাজেভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সচরাচর উপরস্থ কর্মকর্তা তাদের হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য। তবে তারা যদি আগে হাত বাড়িয়ে না দেয়, তবুও আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। হ্যান্ডশেক করার সময় সামনের মানুষটির চোখে চোখ রাখুন এবং স্মিতভাবে হাসুন। যারা হ্যান্ডশেক করার সময় তাদের চোখ সামনের ব্যক্তির চোখের দিকে রাখে না, তাদের আত্মবিশ্বাস এবং সততায় অভাব আছে বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ আপনার মাঝে আত্মবিশ্বাস আনতে চাইলে কিংবা নিজেকে আত্মবিশ্বাসী প্রমাণ করতে চাইলে চোখে চোখ রেখে হ্যান্ডশেক করুন।

মনোযোগ দিন:

যখন আপনার সামনে কেউ কথা বলছে, তখন তাদের কথা শুনুন, মাথা নাড়ুন অথবা স্মিতভাবে হাসুন। এই আচরণগুলো প্রকাশ করে যে, আপনি তার কথা শুনছেন। কারোর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা মানে তার চিন্তাভাবনাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া।
কিন্তু কারোর কথার মাঝে বাধা দেয়া যাবে না। প্রচণ্ড রকমের বাজে স্বভাবগুলোর মাঝে একটি ধরা হয় কারোর কথার মাঝে বাধা দেয়ার স্বভাবকে। আপনি যদি কারোর কথার মাঝে কিছু বলতে চান তবে আপনি বিনয়ের সাথে আপনার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বোঝাতে পারেন। তবে কারোর কথা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করাকেই এক ধরণের নম্রতা বলে ধরা হয়।

উপযুক্ত পোশাক পরুন:


অনেক কোম্পানিতেই ড্রেসকোড কিছুটা শিথিল করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার পছন্দমত যা খুশি তাই পরে অফিসে চলে যাবেন। আমরা যতই বলি না কেনো ‘কোনো বইকে তার কাভার দেখে মূল্যায়ন করতে নেই’, কোনো কিছুর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু আমরা ঠিক এটাই করি। এমনকি অনেক গবেষণায় এটাই প্রকাশিত হয়েছে যে, কারোর ব্যাপারে প্রথমেই যেটি মানুষ লক্ষ করে সেটি হচ্ছে তাকে দেখতে কেমন লাগছে। প্রথম দেখায় এটিই প্রাথমিকভাবে অন্যকে প্রভাবিত করে।
কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাথে প্রফেশনাল জীবনের পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে বেশ পার্থক্য বজায় রাখতে হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা চাইলেই যেকোন রকমের পোশাক পরিধান করতে পারি। কিন্তু কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে ঢোকার পর এটি সম্ভব নয়। কেননা প্রায় সব কোম্পানিতেই ড্রেসকোড মানতে হয়। প্রফেশনাল কাজগুলোর মধ্যে এটি একটি।
অফিসে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট ড্রেসকোড মেনে পোশাক পরে যেতে হবে। সাদা, নীল, ধূসর বা বাদামী রং-এর মত রংগুলো বেছে নিন, কেননা এই রংগুলো অফিশিয়াল বেশভূষার ইঙ্গিত বহন করে। আবার উজ্জ্বল রং কর্পোরেট অফিসে বেশ বেমানান। বরং হালকা রং-এর পোশাক বেশ প্রফেশনাল বেশভূষার পরিচয় দেয়।
আর অফিসে যাওয়ার আগে অবশ্যই কাপড় ইস্ত্রি করে পরে যাবেন। কখনোই কুঁচকানো পোশাক পরে অফিসে যাবেন না। কারণ আগেই বলেছি, এটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের ক্লাসরুম নয়। কর্পোরেট অফিসে ড্রেসকোড মেনে চলা প্রফেশনালিজমের একটি চমৎকার উদাহরণ। মনে রাখবেন, আপনার পোশাকে স্মার্টনেস আনার প্রচেষ্টা দেখে আপনি কাজেও কতটা আগ্রহ আর প্রচেষ্টা দেখাবেন সেটি বুঝতে পারা যায়।

পুরুষদের জন্য 

  • পুরষদেরকে সাধারণ শার্ট এবং প্যান্ট পরতে হবে। খেয়াল রাখবেন এই দুটোর রং-এ যেন সামঞ্জস্য থাকে। হালকা রং-এর শার্ট এবং গাঢ় রং-এর প্যান্ট অথবা উল্টোটা পরতে পারেন। কোনো ধরণের ডিজাইন করা শার্ট পরবেন না। ফরমাল অফিস শার্টগুলো পরুন।
  • শার্ট পরে প্যান্ট-এ গুঁজে রাখতে হবে। ফুলহাতা শার্ট পরুন। শার্টের হাতা গুটাবেন না।
  • প্রফেশনাল দেখানোর জন্য সিল্ক টাই পরা সবচেয়ে ভালো। কোনো ধরণের ডিজাইন করা টাই পরবেন না। টাই যেন খুব ছোট কিংবা খুব বড় না হয়। টাইয়ের প্রান্ত বেল্ট এর বাকল পর্যন্ত যেন পৌঁছায় এমনভাবে পরতে হবে। খেয়াল রাখবেন, চিকন টাই অফিসে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত নয়।
  • কালো বা বাদামী রং-এর লেদারের বেল্ট পরার চেষ্টা করুন। চটকদার ডিজাইন কিংবা মোটা বাকলযুক্ত বেল্ট ব্যবহার করবেন না অফিসে।
  • পোশাকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মোজা পরুন।
  • শব্দ করে এমন জুতা পরা পরিহার করুন। কালো বা বাদামী রং এর লেদারের নরম জুতা ব্যবহার করুন। খেয়াল করুন জুতা পালিশ করা আর ফিতা ঠিকমতো বাঁধা আছে কি না। স্পোর্টসের জুতা কিংবা স্নিকার্স পরে অফিসে যাবেন না।
  • হালকা ঘ্রাণের পারফিউম বা ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন।

নারীদের জন্য: 

  • শরীরের অনেক বেশি অংশ প্রকাশ করে এমন পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। যে পোশাকগুলো আপনার সবচেয়ে ভালো ফিট হয় সেগুলো পরুন। অতিরিক্ত টাইট কিংবা ঢোলা পোশাক পরিহার করুন।
  • পার্টি আর অফিসের বেশভূষার মাঝে পার্থক্যের বিষয়টা খেয়াল রাখুন। কখনোই নিচু গলার ব্লাউজ পরে অফিসে যাবেন না। ‘ডিপ ব্যাক’ কিংবা ‘নুডল স্ট্র্যাপস’ ব্লাউজ পরে কোনোভাবেই অফিসে যাওয়া যাবে না। স্বচ্ছ শাড়ি পরে অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • যারা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতে পছন্দ করেন তারা হালকা রঙের শার্ট আর গাঢ় রঙের প্যান্ট পরতে পারেন।  
  • ভারী গহনা পরে অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মেকাপ করা কিংবা সাথে মেকাপ বক্স নিয়ে অফিসে যাওয়া প্রফেশনাল আচরণের মাঝে পরে না। তাই এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকুন। নখ ছেঁটে প্রাকৃতিক শেডস রঙের নেলপলিশ ব্যবহার করতে পারেন।
  • তীক্ষ্ণ উঁচু হিলের জুতা পরে অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনার হাতব্যাগের রং যেন পোশাকের রঙের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

পরিচ্ছন্ন থাকুন:

আপনি যে পোশাকই পরেন না কেনো, সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরি। অফিসে যাওয়ার আগে চুল আঁচড়ান, দাড়ি ছাঁটুন, নখ কাটুন এবং পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখবেন আপনার পোশাক থেকে যেন বাজে গন্ধ না বের হয়। এরকম হলে কেউ কাজের সময় আপনার আশেপাশে বসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না।

কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখুন:

আপনি অফিসের যেখানে কাজ করেন সে জায়গা পরিষ্কার রাখুন। আপনার ডেস্কে রাখা পুরনো কফির কাপ, অপ্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আপনার কাজের মনোযোগ বিঘ্নিত করবে আর অন্যদের এই অপরিচ্ছন্ন ডেস্ক দেখে বিরক্ত লাগবে। আপনার সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অফিসের অন্যান্যরা ভাবতেই পারেন, যে লোক তার ডেস্কই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে পারে না সে তার কাজ কতটা যত্ন সহকারে করবে?
আপনার কাজের জায়গাটুকুই আপনার পেশাদারি ভাবমূর্তির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই অত্যন্ত যত্নসহকারে আপনার কাজের জায়গা পরিষ্কার করুন। দরকারে একটি ময়লা ফেলার ঝুড়ি ব্যবহার করুন এবং প্রতি সপ্তাহে দুই বা তিনবার করে সেই ঝুড়ির ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।

ব্যবহারকৃত জিনিস নিয়ে সচেতন হোন:

ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে দেখতাম শিক্ষক-শিক্ষিকা বোর্ডে লিখে চলে যাওয়ার সাথে সাথে কে কার আগে গিয়ে বোর্ড মুছবে সেটা নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতো। আস্তে আস্তে যত বড় হলাম, এই প্রতিযোগিতাটা কমতে থাকলো। শুধু যে কমে গেলো তাই না, প্রায় বন্ধই হয়ে গেলো। বড় হওয়ার পর আমরা আমাদেরই ব্যবহারকৃত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এত বেশী অসচেতন হয়ে গেলাম যে, এক জায়গা থেকে একটা জিনিস নিয়ে আমরা কাজ শেষে সে জায়গায় না রেখে অন্য জায়গায় রাখছি আর পরে দরকারের সময় সেই জিনিস খুঁজে না পেয়ে বাড়ি মাথায় তুলছি।
অফিসে কাজ করার সময় প্রিন্টার, স্ট্যাপলার থেকে শুরু করে অনেক রকমের জিনিসই সবার শেয়ার করে ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যপারটি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো যে জিনিস যেখান থেকে নেয়া হচ্ছে, কাজ শেষে সেটি সেখানেই রেখে দিতে হবে। এতে করে পরবর্তীতে জিনিসটি হারানোর সম্ভাবনা থাকে না। আর আপনি যখন কোনো জিনিস ব্যবহার করবেন, খেয়াল রাখবেন অন্য কেউ পরবর্তীতে ব্যবহার করার জন্য যেন সেটি তার পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে না হয়। আপনার ময়লা করা জিনিস সবসময় আপনিই পরিষ্কার করে রেখে আসবেন। তাহলে দেখবেন চমৎকার যে প্রফেশনাল কর্মপদ্ধতি চালু হবে অফিসে সেটির জন্য আপনাকেও কখনও অন্যের অপরিষ্কার করে রাখা জিনিস ব্যবহার করতে হবে না। কাজ করতে গিয়ে আপনিও সবসময় পরিষ্কার করা জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারবেন।

সবাইকে সম্মান দিন:

এটা সবাই জানে যে, একটি প্রতিষ্ঠানের সবাই তাদের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। একে অন্যকে প্রতিযোগী ভেবে যদি আপনি কেবল মই বেয়ে আপনার ক্যারিয়ারে উপরের দিকেই উঠতে চান, তবে আপনার সহকর্মীদের সাথে আপনার সম্পর্ক খুবই বাজে অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। 
আপনি আপনার সহকর্মী, কোনো প্রজেক্ট এ আপনার টিম এর অন্যান্য সদস্য এমনকি কোম্পানির কোনো ইন্টার্ন অথবা সিইও এর সাথে চমৎকার আচরণ করুন, সবাইকে সম্মান দিন। দেখবেন আপনি তার বিনিময়ে সেরকমভাবেই ফিডব্যাক পাচ্ছেন।
আমার বাবার কাছ থেকে শোনা একটা কাহিনী বলি। উনার ভাষায়, “আমাদের অফিসের ম্যানেজার সেরকমভাবে কাউকে সাহায্য করেন না। কিন্তু উনি এত চমৎকারভাবে সবার সাথে কথা বলেন আর সবাইকে সম্মান করেন যে তার প্রতি সবাই সন্তুষ্ট। তিনি কাউকে কোনো কিছু করতে বললে তার কাজগুলো অফিসের লোকজন বেশ আগ্রহ নিয়েই ডেডলাইনের আগে করে দেয়।
একবার জমিজমা সংক্রান্ত কারণে তাকে হুমকি দিতে কিছু লোক অফিসে আসে। উনি তাদেরকে এত সুন্দর করে আপ্যায়ন করে তার রুমে বসিয়ে চা, বিস্কুট খাওয়ার প্রস্তাব দেন, এত ভালো ব্যবহার করেন আর সম্মান দেন যে, হুমকি দিতে আসা লোকগুলো পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে তার সাথে কোলাকুলি করে চলে যায়।”
অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, চমৎকার ব্যবহার আর সবাইকে সম্মান দিলে কত কিছুই না হতে পারে! অফিসে সবাইকে সম্মান দিয়ে আপনি যেমন আপনার পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারবেন, তেমনি আপনি হয়ে যেতে পারেন আপনার অফিসের মধ্যমণি।

দরজা ধরে রাখুন:

যখন আপনি দরজা খুলে কোথাও যাচ্ছেন তখন খেয়াল করুন আপনার পেছনে কেউ আসছে কিনা। যদি কেউ আসে তবে তার জন্য দরজা খুলে ধরে রাখুন। তাকে যেতে দিয়ে এরপর আপনি যান। লিফটে ওঠার পরেও যদি আপনি দেখেন কেউ আসছে তবে তার জন্য লিফট এর দরজা খোলা রাখুন।

অতিরিক্ত শেয়ার কিংবা দূরত্ব তৈরি থেকে বিরত থাকুন:

আপনার ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাদারি জীবনের মাঝে একটি সীমারেখা টানুন। কাজের জায়গায় গিয়ে সহকর্মীদেরকে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনী বলা নিয়ে বসে যাবেন না। কর্মক্ষেত্রের জন্য এটি উপযুক্ত কাজ নয়।
অতিরিক্ত কিছু শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন মানে আবার এই নয় যে সহকর্মীদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেলবেন। আপনার সহকর্মীরা আপনার সম্পর্কে অল্প কিছু জানতে চাইতেই পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কোন ব্যাপারগুলো কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদেরকে বলার মত আর কোন ব্যাপারগুলো বলার মত নয়।
রাজনীতি এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা প্রায় প্রতিটা কোম্পানিতেই অনুপযুক্ত হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করবেন। আর আপনার যদি ব্যক্তিগত কিংবা অসুস্থতাজনিত কোনো ব্যাপার থাকে যেটি আপনার কাজকে প্রভাবিত করবে তবে অফিসের ম্যানেজার কিংবা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাদা করে কথা বলে নিন।
মনে রাখবেন, আপনি হয়ত আপনার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কথাই বলে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন, কিন্তু আপনার সহকর্মীরা কিন্তু সেগুলো শুনতে কিংবা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাও করতে পারে।

সবাইকে যার যার মত কাজ করতে দিন:

আপনি হয়ত অনেকের সাথে গল্পগুজব করে কাজ করতে ভালোবাসেন। কিন্তু অনেকেই থাকতে পারে যারা শব্দের মাঝে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাদেরকে কাজ করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিন। কর্মক্ষেত্রে কাজ করার বদলে কারোর সাথে গল্প করবেন না কিংবা অন্য কারোর কথা শোনার জন্য আড়ি পাতবেন না।

অযথা অভিযোগ করবেন না:

অফিসের কোনো একটি ব্যাপারে যদি আপনার নজর পড়ে যেটি অফিসের নিয়ম-কানুন এবং নৈতিকতা বিঘ্নিত করে, তবে ব্যাপারটি নিয়ে ঘ্যানঘ্যান না করে উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে খবরটি পৌঁছান।
যদি অন্য কোনো ব্যাপারে আপনার অভিযোগ থাকে, তবে কিছু বলার আগে ভেবে নিন। সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় ভেবেচিন্তে বলুন। বিষয়টিকে ত্রুটিপূর্ণ বা ভুল হিসেবে আখ্যা দেয়ার পরিবর্তে এটিকে নতুন করে উন্নত করার সুযোগ হিসেবে প্রকাশ করুন।
আপনি আপনার অভিযোগ এর মাধ্যমে অনেক সময় অন্য কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন মনে করুন কোনো মিটিং এ লাঞ্চ করার পর আপনি বলে বসলেন খাবার খুবই বাজে ছিল। লাঞ্চ এর দায়িত্বে থাকা আপনার সহকর্মীর হয়ত এতে খারাপ লাগতে পারে। তাই অভিযোগ করার আগে ভেবে বলুন এবং বিষয়টিকে অভিযোগ হিসেবে না প্রকাশ করে পরবর্তীতে কীভাবে ভালো করা যায় তেমন ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে চমৎকার উপায়ে উপস্থাপন করুন।
এই পর্বে আমরা কর্মক্ষেত্রে যেসব শিষ্টাচার মেনে চলা দরকার সেগুলো জানলাম। পরবর্তী পর্বে আমরা দেখব প্রফেশনালিজম,খাবার টেবিলে, যোগাযোগে আর মিটিং এর শিষ্টাচারগুলো সম্পর্কে। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড এ ঢোকার আগে সমস্ত শিষ্টাচারগুলো জানতে আর পরবর্তী পর্ব পড়তে চোখ রাখুন টেন মিনিট স্কুল ব্লগে।
ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে shutterstock থেকে।
তথ্যসূত্র-

R @ S. Theme images by PLAINVIEW. Powered by Blogger.